ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠিতে একাধিক ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন সম্পর্কের পর আবার নতুন করে অন্য ছেলেকে পটানোর অভিযোগ ও তথ্য প্রমানসহ মিলছে স্বর্ন কিশোরি নামধারী তরুনী নাসরিন আক্তার সারার বিরুদ্ধে। শহরের ফকির বাড়ী বড় ভগ্নিপতির বাসায় বসবাস করা ঝালকাঠি সরকারী মহিলা কলেজে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী এই তরুনীর বিরুদ্ধে।
ইতিপূর্বে আরো ৪টি ছেলের সাথে প্রেম-ভালবাসার নামে তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ এক বছর ধরে প্রেম ও পারিবারিক ভাবে বিবাহের প্রস্তাব চলাকালে ৪র্থ প্রেমিক যুবায়ের আদনানের হাতে ধরা পড়ায় এখন তাকে ফাঁসাতে ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে ঝালকাঠির নামধারী স্বর্ণকিশোরী এই তরুনীকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ঝড় বইছে। আবার অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘ঝালকাঠিতে আরেক মিন্নির উত্থান, রিফাতের মত ধ্বংস হতে পারে আরো অনেক যুবকের পরিবার’মর্মে সবাইকে সাবধান করছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে মিন্নি হয়ে ওঠা নামধারী স্বর্ণকিশোরী তরুনী নাসরিন আক্তার সারার প্রেমের নামে অর্থ হাতানোর একাধিক গল্প বেড়িয়ে এসেছে। কে এই নাসরিন আক্তার সারা কি হয়েছিল শহরের ফকিরবাড়ি এলাকার নাসরিন আক্তার সারার বোনের বাসায়? কেনই বা এই ছেলে তার সাজানো নাটকে পা বাড়ালো। যেখানে বছর খানিক প্রেমের সম্পর্কের পর পারিবারিক সম্পর্কের দিকে এগোচ্ছিল হঠাৎ আজ কেন তার বিরুদ্ধে আনা হলো নির্যাতনের অভিযোগ? সকলেরই মনে এই প্রশ্নের উত্তের খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সাবেক প্রেমিক ও বর্তমান আসামী জুবায়ের আদনান জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে জুবায়ের আদনানের সাথে ৪র্থ প্রেমিক হিসাবে সারার সম্পর্কের পথ চলা শুরু করে ক্রমেই সেই প্রেম পৌঁছায় পারিবারিক সম্পর্কে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরেই বিভিন্ন সময় সারা ও তার পরিবারের সাথে ওঠাবসায় জুবায়েরের ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় ঐ পরিবারের সাথে। আর এই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় জুবায়েরের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পাঁচ হাজার, কখনো দশ হাজার টাকাও ধার বাবদ নিয়ে আসছিল সারা ও তার পরিবার। এই এক বছর সম্পর্কের সময় কালে সে জানতে পারে প্রেমের নামে অর্থ হাতানোই পেশা ও নেশা হিসাবে নেয়া এই নাসরিন আক্তার সারা কিশোরী বয়স থেকে প্রেমের খেলায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। তার সাবেক দুই প্রেমিকের সাথে অর্থ-বাণিজ্যের রেশ কাটলে তাদের সাথে প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটেছে। তা সত্বেও অবুজ প্রেমিক জুবায়ের তার এই সম্পর্কের বিষয় নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক পিতাকে জানালে পারিবারিক ভাবে তারা নাসরিন আক্তার সারাকে দেখতে আসে।
পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে সারার কাহিনী, পরিবারের মানসিকতার ও সারার ফেসবুকে তৎপরতা দেখে জুবায়েরের পিতা বিয়েতে অমত দিলে সারার পরিবারে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়ে। সারা তার মা-বড় বোন জুবায়েরকে তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে নানা পরামর্শদেয় ও সারা জুবায়েরকে নিজেরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলে সে বাবা-মাকে ম্যানেজ করেই বিয়ে করবে বলে জানায়।
এরমধ্যেই জুবায়েরের পাশাপাশি সারা আরো একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরার বিষয়টি জানতে পেরে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ নিয়ে সারা ও তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য শুক্রবার দুপুরে জুবায়ের তাদের বাসায় যায়। সেখানে বরিশালের এক যুবক (৫ম প্রেমিক) ও সারাকে খোশগল্পে মগ্ন দেখে জুবায়ের আরো ভেঙ্গে পরে। সে সারা ও তার বড় বোন সদর চৌমাথার বৌ-রানী বিউটি পার্লারের কর্মচারি আখিনুর আক্তার অনির কাছে এর কারন জানতে চাইলে তার উল্টো জুবায়েরের সাথে র্দূব্যবহার করে ও চর-থাপ্পর মেরে বাসা থেকে বেড় করে দেয়। এরপর সে চলে আসলে সারা ও তার পরিবার হামলা-মারধরের কাহিনী রটিয়ে এ ফিটিং মামলা দায়ের করে বলে জুবায়ের জানায়।
অন্যদিকে স্বর্ণকিশোরী তরুনী নাসরিন আক্তার সারা তার দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করে, জুবায়ের তাকে বেশকিছু দিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জুবায়ের পথে ঘাটে তাকে বিরক্ত করতে থাকে। ঘটনার দিন তার বাসায় ডুকে তার উপর হামলা, মারধর ও ভাংচুর চালায় বলে দাবী করেন। এ সময় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরিবারের অন্যান্যরা তাকে ঝালকাঠি সদরহাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
এদিকে ৪/৫ যুবকের সাথে একান্ত ছবি ও সম্পর্কের বিষয়ে নাসরিন আক্তার সারা জানান, একটা ছবি তার মামার সাথে বাকি ছবিগুলো বিভিন্ন সময় বন্ধুদের সাথে তোলা। সেগুলো নিয়ে কেউ অপপ্রচার করলে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। বিভিন্ন ছেলেদের সাথে ফেসবুক চেটিংয়ে স্কিনসটগুলো ভাইারাল হওয়া নিয়ে সারা বলেন, এগুলো সে (যুবায়ের) নিজেই আমার ফেসবুক আইডিতে এসব লিখে অপপ্রচার করছে। কারন গত ৩ দিন আগে যুবায়ের তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিয়েছে, তাই সে তার ফেসবুক চালাতে পারছেনা বলে দাবী করেন। আইডি হ্যাকের বিষয় কোন আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সে কোন সদুত্তোর দিতে পারেনি, এবং ১ বছর যাবত জুবায়েরের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন ওর সাথে আইনের মাধ্যমে বুঝবো। বর্তমানে সে শারীরিক ভাবে কিছুটা সুস্থ হওয়ায় শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে নাম কেটে বাসায় এসেছেন বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে ঝালকাঠি থানার (ভারপ্রাপ্ত) অফিসার ইনচার্জ আবু হাতের মিয়া জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় নাসরিন আক্তার সারা নিজে বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করলে নারি ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ দা:বি: ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় তা এজাহার হিসাবে নথিভূক্ত করা হয় (মামলা নং-২)। মামলার তদন্ত ও আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply